ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির উপায় - ডিপ্রেশন হলে কি কি সমস্যা হয়

ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির উপায়

কোন বিষয়ে কষ্ট পেলে বা চিন্তা করতে থাকলে সেই চিন্তা দেহের স্বাভাবিক কার্যকারিতা নষ্ট করে দেয়। ভারসাম্যে  ব্যাঘাত ঘটায় দেহের হরমোনের। আমরা নিজেরাই আমাদের জীবনের চাহিদাকে সবক্ষেত্রে এতটাই বেশি করে ফেলি যে তার তুলনায় প্রাপ্তি কম হলেই সেটাই আমাদের মানসিক অবসাদ এ পরিণত হয়, আর দিনের পর দিন এটা চলতে থাকলে সেটা ডিপ্রেশন এ রূপান্তরিত হয়।

ডিপ্রেশন বা বিষণ্ণতা কি?

ডিপ্রেশন বা বিষণ্ণতা এমন একটি রোগ যা ক্রমাগত দুঃখ, শূন্যতা এবং আনন্দ হারানোর অনুভূতি সৃষ্টি করে। সাধারণ মেজাজের যে ওঠানামা তা থেকে এটি অনেকটা ভিন্ন। ধীরে ধীরে মানুষ এটিকে জীবনের একটি  নিয়মিত অংশ হিসেবে অনুভব করে।

ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির উপায়
ডিপ্রেশন

জীবনের গুরুত্বপূর্ণ ধাপ, যেমন চাকরি হারানো বা প্রিয়জনের জন্য শোক বিষণ্ণতাকে আরও জাগিয়ে তুলতে পারে। কিন্তু ডিপ্রেশন কঠিন সময়ে একজন ব্যক্তি সাময়িকভাবে যে নেতিবাচক অনুভূতি হতে পারে তার থেকে আলাদা।

পরিস্থিতির পরিবর্তন সত্ত্বেও ডিপ্রেশন প্রায়শই দূর হয় না এবং এমন অনুভূতির সৃষ্টি করে যা তীব্র এবং দীর্ঘস্থায়ী।

ডিপ্রেশন এমন একটি সমস্যা যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া কঠিন। বিভিন্ন ধরনের বিষণ্ণতা থাকলেও, সবচেয়ে সাধারণ হল মেজর ডিপ্রেসিভ ডিসঅর্ডার। যার লক্ষণগুলি কমপক্ষে দুই সপ্তাহ স্থায়ী হয়৷ তাছাড়া এই পরিস্থিতি কয়েক সপ্তাহ, মাস বা বছর ধরে চলতে পারে।

ডিপ্রেশন কি নিরাময়যোগ্য?

ডিপ্রেশনের কিছু কার্যকর চিকিৎসা রয়েছে যা রিকভারিতে সাহায্য করে। যত দ্রুত চিকিৎসা শুরু হবে, তত বেশি সফলতা আসতে পারে। কিছু মানুষ একটা সময় পরে আর কখনও হতাশা অনুভব করে না। অনেকে আবার এটি অনেকটা সারা জীবন বয়ে নিয়ে বেড়ায়। 

ডিপ্রেশনে ভুগছে এমন অনেকই একটি পরিকল্পিত চিকিৎসার মাধ্যমে রিকভারি করতে পারে। তবে অনেক ক্ষেত্রে কার্যকর চিকিৎসা সত্ত্বেও এটি আবার ফিরে আসতে পারে। সুতরাং ডাক্তারের পরামর্শ অনুসারে চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়া উচিত। তাহলে এটি আপনার নিয়ন্ত্রণে থাকবে।

কি কি কারণে ডিপ্রেশন জীবনে প্রবেশ করে?

ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির উপায়

অপমান বোধ

যদি কোন ব্যক্তি অন্য একজনের কাছ থেকে প্রতিনিয়ত অপমানিত হয় তাহলে যখন তার মনের মধ্যে চরম আঘাত লাগবে তখন সে ডিপ্রেশন এ ভুগবে। এটা দেখা দেয় যারা একটু লাজুক ধরনের মানুষ, যাঁদের আত্মমর্যাদাটা অন্যের কথার উপরে নির্ভর করে, নিজেকে সব সময় অন্য সবার থেকে কম ভাবে, যারা নিজেকে নিয়ে হীনমন্যতায় ভোগে তাঁদের ডিপ্রেশন এ ভোগার প্রবণতা বেশি লক্ষ্য করা যায়।

একাকিত্ব

কোন মানুষ যদি অনেক লোকজন পছন্দ করে, কোলাহল পছন্দ করে, কিন্তু কোন কারণে সে যদি পরে একাকী জীবন যাপন করতে বাধ্য হয় কিংবা অন্য কারো কথায় আঘাত পেয়ে নিজেকে গুটিয়ে নেয় সে তখন নিজেকে অসহায় বোধ করে এবং একাকিত্বের যন্ত্রণা তার মনে অসহ্য হয়ে কাটার মতো বিঁধতে থাকে আর পরবর্তীতে সেটাই ডিপ্রেশন এ পরিণত হয়। কিংবা যারা দিনের পর দিন একা থাকে বিশেষ কারো সঙ্গে মেশে না তারা ও অনেক সময় নিজেকে পৃথিবীর মধ্যে অসহায় ব্যক্তি মনে করে ডিপ্রেশনে ভোগে।

বংশগত কারণ

কিছু কিছু পরিবারে এমন অনেক ব্যক্তি থাকেন যারা তাদের বংশের বোঝা বয়ে ডিপ্রেশন এর শিকার হন। এদের সব বিষয়ে উত্তেজিত হয়ে পড়ার প্রবণতা দেখা দেয়। একটা সহজ সরল কথাও সহজ ভাবে না ভেবে জটিল আকার তৈরি করে, ফলে নার্ভে সব সময় চাপ সৃষ্টি হয়। এভাবে চলতে চলতে একটা সময়ের পরে মনে ডিপ্রেশন বাসা বাঁধে। এমন অনেক পরিবারই আছে যাঁদের বংশে একজন না একজন ডিপ্রেশন এর শিকার হয়।

বর্তমান জীবনে কোন বড় পরিবর্তন এলে

মানুষের জীবন সব সময় এক নিয়মে চলে না।চলতি পথে এমন অনেক সময় আসে যেই সময় টা পুরো জীবনেরই মোড় ঘুরিয়ে দেয়। এই সময়ে যারা নিজেকে সামলাতে জানে তারা অনেক দৃঢ় এগিয়ে যায় কিন্তু যারা এই ধাক্কা সামলাতে না পারে তারা ডিপ্রেশন এ চলে যায়। ধরুন কেউ একজন  কোন বড় অফিসে চাকরি করে কোন একটি কারণে তার চাকরিটা চলে গেল। এই সময় তার আগের জীবন যাত্রায়  পরিবর্তন আসবে, তার পরিবারের বিলাসিতা বন্ধ হবে, তার চলার ধরন পাল্টে যাবে, ফলে এই সময় সে যদি নিজেকে শক্ত করে না ধরে থাকতে পারে তাহলে তার মনে ডিপ্রেশন আসাটা কেবল সময়ের অপেক্ষা। তাই জীবনে হঠাৎ যদি কোন বড় পরিবর্তন আসে তাহলে তাকে মেনে নিয়ে এগিয়ে যাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।

ডিপ্রেশন এর লক্ষণ

হতাশা, রাগ, দুঃখ, সব সময় মন খারাপ হওয়া ভাব,মনে সংশয়, দোদুল্যমানতা, বিরক্তি, খিদে ও ঘুম ভীষণ কমে যাওয়া বা বেড়ে যাওয়া, কারো সঙ্গে কথা বলতে ইচ্ছে না করা, শব্দ বা আলোতে বিরক্তি, হঠাৎ করে প্ল্যানিং ছাড়াই দেহের ওজন বেড়ে যাওয়া বা কমে যাওয়া, মাথা ব্যথা, সব কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগা, কোন কিছুতে ই আনন্দ না পাওয়া বা মনোনিবেশের অভাব, সারা গায়ে, হাতে পায়ে ও পেটে  ব্যথা অনুভব করা,ক্লান্তি, নিজেকে সব কিছু থেকে সরিয়ে নেওয়ার প্রবণতা।

এর মধ্যে যে কোন পাঁচটি বা ততোধিক লক্ষণ যদি আপনার মধ্যে দু`সপ্তাহের ও বেশি সময় ধরে থাকে তাহলে সে ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া আপনার জন্য প্রয়োজনীয় হয়ে পড়বে। কারণ এই সব সমস্যা বেশি দিন ধরে পুষে রাখা মানে রোগকে আরো জটিল করা। অর্থাৎ মাইনর ডিপ্রেশন টার্ন করতে পারে মেজর ডিপ্রেশনে। অবশ্য ডিপ্রেশন কে কোনও অর্থেই কিন্তু জটিল রোগ বলা উচিত হবে না।বরং এটাকে বলা যেতে পারে অসুবিধা।এটা মন খারাপ থেকে তৈরি হওয়া শারীরিক ও মানসিক সমস্যার কারণে স্বাভাবিক জীবন যাত্রা থমকে যেতে পারে কমতে  পারে জীবনের মান।

মেজর ডিপ্রেশন

যখন ডিপ্রেশন এর লক্ষণ গুলো অত্যন্ত প্রকটভাবে দীর্ঘদিন ধরে বহাল তবিয়তে থাক অথবা কিছু দিন পর পরই দেখা দেয় তখন তাকে মেজর ডিপ্রেশন বলে। মেজর ডিপ্রেশন থেকেই আত্মহত্যার প্রবণতা দেখা দেয়।

মাইনর ডিপ্রেশন

মাইনর ডিপ্রেশন জীবনের কোন একটা সময়ে কোনও দুঃখজনক ঘটনা বা পরিবেশের কারণে দেখা দেয়। এই সময় কাছের মানুষের সান্নিধ্য ভীষণ প্রয়োজন হয়।

অ্যাটিপিকাল ডিপ্রেশন

এটা মেজর ডিপ্রেশনেরই একটা ধরণ। যদিও এক্ষেত্রে ওষুধ এবং সাইকোলজিকাল কাউন্সেলিং এর প্রয়োজনীয়তা দেখা দিতে পারে। এই সময় মানুষের সঙ্গে কথা বলা উচিত। মনোরম পরিবেশে যাওয়া দরকার তাহলে কিছুটা হলেও মন থেকে ডিপ্রেশন চলে যাবে।

ডিপ্রেশন

অবসাদগ্রস্ত মানুষ জনের রক্তে ভিটামিন-ডি এর অভাব থাকলেও ডিপ্রেশন আসে। তবে ভিটামিন - ডি এর সঙ্গে ডেফিশিয়েস এর মধ্যে অবসাদ বা ডিপ্রেশন সম্পর্ক নিয়ে আরো গবেষণার প্রয়োজন।

মানুষ কেন ডিপ্রেশনে ভোগে

প্রতিটি মানুষই জীবনের কোন না কোন পর্যায়ে গিয়ে ডিপ্রেশনে পড়েন। চলুন জেনে নেওয়া যাক মানুষ কেন ডিপ্রেশনে ভোগে-

১. অতিরিক্ত পড়াশোনার চাপ

ছাত্রাবস্থায় মানুষ বেশি ডিপ্রেশনে ভোগে অতিরিক্ত পড়াশোনার চাপের কারণে। আজকাল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে এতো এতো চাপ যে দম ফেলার সময় নেই। ক্লাস, এসাইনমেন্ট, প্রেজেন্টেশন, মিড টার্ম, ল্যাব, সেমিস্টার ফাইনাল সহ আরও কত কি! অনেক ছাত্রই এতো পড়ার চাপ নিতে পারে না। অনেকে ডাক্তার হবার বদলে ইঞ্জিনিয়ার হচ্ছেন পরিবারের চাপে। অনিচ্ছা সত্ত্বেও এটা পড়ার ফলে আস্তে আস্তে ডিপ্রেশনে চলে যায়। বাবা-মা প্রায়শই নিকট আত্মীয়-স্বজনের ছেলে মেয়ের সাথে তার সন্তানের পড়াশোনার তুলনা করে, আশানুরূপ সাফল্য না পাবার কারণে। এতে সন্তানের মনে প্রভাব পড়ে ও ডিপ্রেশন কাজ করে।

২. বয়ঃসন্ধিকালীন

 বয়ঃসন্ধি প্রতিটি মানুষের জীবনের একটি অন্যতম অংশ। এ সময় ছেলে-মেয়েদের শারীরিক পরিবর্তনের সাথে সাথে মানসিক পরিবর্তনও হয়। কিন্তু বাবা-মায়েরা শুধুমাত্র শারীরিক পরিবর্তনের দিকেই গুরুত্ব দেন, কিন্তু মানসিক পরিবর্তন সম্পর্কে সচেতন নয়। চুপচাপ থাকা, অনীহা, নিজেকে গুটিয়ে নেওয়া, রাগ প্রভৃতি এসময়ে দেখা দেয়। এমন ডিপ্রেশন অনেকের কেটে যায় আবার কারও কারও থেকেও যায়।

৩. বেকারত্বের কারণে

পড়াশোনা শেষ করে স্বাবলম্বী না হওয়া বা চাকরি না পাওয়া পর্যন্ত সময়টাতে মানুষ খুবই ডিপ্রেশনে ভোগে। বেকার অবস্থায় বাড়ি থেকে টাকা নিয়ে চলতে লজ্জা করে আবার না নিয়েও অনেক সময় উপায় থাকে না৷ ফলে ডিপ্রেশনের শুরু। বারবার জব ইন্টারভিউ দিয়ে চাকরি না পাবার হতাশা বড্ড ভয়াবহ। আশেপাশে মানুষের কটাক্ষের বিষয়টি অনেকেই নিতে পারেন না। ফলে কাঙ্খিত ফলাফল পেতে অনেক সময় দেরি হয় বা হয়তো সেই পর্যন্ত অনেকেই পৌঁছাতে পারে না। অনেকেই বেকার অবস্থায় শুধুমাত্র ডিপ্রেশনে পড়ে নেশাগ্রস্ত হয়, আত্মহত্যার দিকে ধাবিত হয়।

৪. কর্মজীবনে অতিরিক্ত কাজের কারণে

বেকারত্বের চড়াই-উৎরাই পার করে মানুষ যখন কর্মজীবনে প্রবেশ করে তখনও ডিপ্রেশন সৃষ্টি হয়। ধরুন একজন ব্যক্তি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। কাজের চাপ, স্ট্রেস, যোগ্যতানুসারে কাঙ্খিত জবটি না পেলে, কম বেতন, জবে একঘেয়েমি বিষয়গুলোর সাথে ডিপ্রেশন সম্পর্কিত। প্রতিষ্ঠানের মালিক বা ব্যবসায়ীর চিন্তা প্রতিষ্ঠান কিভাবে চলবে, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কিভাবে ম্যানেজ করবেন, বেতন দিবেন, ব্যবসা কিভাবে বাড়বে ইত্যাদি। এমন বিভিন্ন কারণে কর্মজীবী মানুষও ডিপ্রেশনে পড়ে।

৫. দাম্পত্য কলহের কারণে

দাম্পত্য কলহ জীবনকে বিষাদময় করে তোলে। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া, কলহ, মন খারাপ, মনোদ্বন্দ্ব, পাওয়া, না-পাওয়া হিসাব মেলানো প্রভৃতি কারণে ডিপ্রেশনের শুরু। দাম্পত্য জীবনের ডিপ্রেশন এতোটাই ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি করে যেখানে ডিভোর্স ও আত্মহত্যার মতো বিষয়গুলো অহরহ ঘটে থাকে।

অনেক গৃহিণী তাদের জীবদ্দশায় সুখী নন। মেনে নেওয়া মানিয়ে নেওয়ার বিষয়গুলোর সাথে এডজাস্ট করতে করতেই একসময় তারা ডিপ্রেশনে পড়ে। যখন নিজেদের অস্তিত্ব যখন হারাতে বসে তখনই তারা প্রচন্ড ডিপ্রেশনে ভোগে।

৬. হরমোনাল ইমব্যালেন্সের কারণে

হরমোনাল ইমব্যালেন্সের কারণে ডিপ্রেশনের সৃষ্টি হয়। খিটখিটে ভাব, অনীহা, মনমেজাজ ভালো না থাকা, মুড সুইং প্রভৃতি বিষয়গুলো হরমোনাল ইমব্যালেন্সের সাথে সম্পর্কিত। তাছাড়া মেয়েদের পিরিয়ড চলাকালীন সময় ও মেনোপজের পূর্ববর্তী-পরবর্তী সময় হরমোনের ইমব্যালেন্স হয়, যার ফলে ডিপ্রেশনের সৃষ্টি হয়।

৭. গর্ভাবস্থায়

গর্ভাবস্থায় একজন নারী সবচেয়ে বেশি ডিপ্রেশনে ভোগেন। এই সময় এতো পরিমাণে হরমোনের ওলট-পালট হয় সেটা অবর্ণনীয়। একজন নারী ব্যক্তিগত বা পারিবারিক কারণে যদি অধিক পরিমাণ ডিপ্রেশনে ভোগেন তাহলে তার প্রভাব পড়ে গর্ভের বাচ্চার উপর। ফলে পরবর্তীতেও বাচ্চাটি হয় খিটখিটে, বদমেজাজী। কর্টিসল হরমোনের প্রভাবে এটি হয়ে থাকে। তাছাড়া গর্ভবতী মায়ের খিটখিটে মেজাজ, মুড সুইং, অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা, অল্পেই রেগে যাওয়া, কান্না করা প্রভৃতি বিষয় লক্ষ্য করা যায়। প্রসব পরবর্তীকালীন সময়েও মা ডিপ্রেশনে আক্রান্ত হন যদিও তা সাময়িক। তবে খেয়াল রাখতে হবে তা যেন দীর্ঘদিন না চলে। কারণ নতুন একজন শিশুর পুরো দায়িত্ব তার থাকে ফলে পরিবর্তন আসবে এটিই স্বাভাবিক।

৮. শারীরিক রোগ

দীর্ঘদিনের শারীরিক রোগ যেমন ডায়াবেটিস, কিডনি, কোলেস্টেরল, থাইরয়েড, পিসিওডি, মেটাবলিজম ডিসঅর্ডার প্রভৃতি সহ আরও অনেক ক্রনিক রোগের কারণে মানুষ ডিপ্রেশনে থাকে।

৯. বডি শেমিং

অনেকেই একটু স্বাস্থ্যবান হয়ে থাকেন বলে অন্যের কটুক্তির স্বীকার হন। সামাজিক ভাবে তাদের হেয় করা হয়। তাদের স্থূলতা নিয়ে কথা বলা হয়। আবার মোটা, কালো, বেঁটে, চিকন, দেখতে সুশ্রী নয় এমন মানুষদেরও কটু কথার স্বীকার হতে হয়, ফলে এমন শ্রেণির মানুষগুলো ডিপ্রেশনের স্বীকার হন।

১০. রিলেশনশীপ

ইদানীং তরুণ সমাজে ডিপ্রেশনের অন্যতম মূল কারণ রিলেশনশীপ। একতরফা রিলেশনশীপ, মান-অভিমান, ঝগড়া-বিবাদ, কম্পেয়ার করা, ব্রেক-আপ, বিয়ে নিয়ে জটিলতা প্রভৃতি কারণে ডিপ্রেশনের সৃষ্টি হয়।

১১. প্রায়োরিটি

শিশু থেকে বৃদ্ধ সকলেই অন্যের প্রায়োরিটি চায়। অনেকেই মনে করেন তাকে হয়তো পরিবার-আত্মীয়-প্রিয়জন প্রায়োরিটি দিচ্ছে না। পছন্দের মানুষের মনোযোগ আকর্ষণ ও অন্যের প্রাধান্যকে প্রধান করে দেখতে গিয়ে মানুষ ডিপ্রেশনে পড়ে।

১২. বৃদ্ধ বয়সে

ডিপ্রেশন যে শুধু তারুণ্যের সেটি নয়, বৃদ্ধ বয়সেও মানুষ ডিপ্রেশনে ভোগে। বয়সের ভারত্ব, বিভিন্ন রোগ-ব্যাধি, আর্থিক স্বাচ্ছন্দের অভাব ও টানাপোড়েন থাকলে, পারিবারিক সমঝোতা না থাকলে, সন্তানদের সাথে ভালো সম্পর্ক না থাকলে, চলাফেরায় অন্যের উপর নির্ভর করতে হলে, জীবনের অর্জন কম হলে বৃদ্ধ বয়সেও মানুষ ডিপ্রেশনে পড়ে।

১৩. সামাজিক কটাক্ষের কারণে

অনেকেই আছেন যারা অন্যের সমালোচনা করতে পছন্দ করেন। পড়াশুনায় ভালো না হলে, ভালো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চান্স না হলে, বিয়ে না হওয়া, চাকরি না হওয়া, সন্তান না হওয়া বা দেরিতে হওয়া, বাহ্যিক সৌন্দর্য প্রভৃতি কারণে অনেকেই সমালোচনাসহ মানুষের কটাক্ষের স্বীকার হন। ফলে উক্ত ব্যক্তি ডিপ্রেশনে পড়ে যায়।

১৪. অতিরিক্ত ডিভাইস ও সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার

বর্তমান সময়ে অতিরিক্ত ডিভাইস ও সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার ডিপ্রেশন ও একাকীত্বের সৃষ্টি করে। অতিরিক্ত গেমে আসক্তি, ইন্টারনেটে আসক্তি, ফেসবুক, ইউটিউবে আসক্তি একসময়ে ডিপ্রেশনের জন্ম দেয়। অনেকেই ঘন্টার পর ঘন্টা ফেসবুক স্ক্রল করেন ও ডিপ্রেশন বাড়তে থাকে। কারও জব হচ্ছে, বিয়ে হচ্ছে, বেবি হচ্ছে, ঘুরতে যাচ্ছে, রেস্টুরেন্টে যাচ্ছে প্রভৃতি দেখে অনেকেই ভাবছে তারা কতই না সুখে আছে আমার কেন এটা নাই ওটা নাই কিন্তু তারা ভাবেন না মানুষের ফেসবুকের বাহিরের একটা জীবন আছে। যেটি সমস্যাপূর্ণ, যা অনেকেই শেয়ার করেন না শুধু আনন্দের অংশটুকু শেয়ার করেন। ডিপ্রেশন, রাগ, দুঃখ অনেকেই ফেসবুকে শেয়ার করেন। কেউ বিরূপ মন্তব্য করলে তখনও ব্যক্তির ডিপ্রেশনের সৃষ্টি হয়। অতিরিক্ত গেম ও ইন্টারনেট আসক্তি মাদকাসক্তির চেয়েও ভয়াবহ।


দুশ্চিন্তা এবং ডিপ্রেশন ক্ষতিকারক প্রভাব বা কুফল কী কী

ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির উপায়

অনিদ্রা

সঠিক পরিমাণ নিদ্রা সুস্থ থাকার জন্য অবশই প্রয়োজন, একটি সুস্থ মানুষের দিনে 7-8 ঘণ্টা গভীর ভাবে ঘুমের প্রয়োজন। কিন্তু দুশ্চিন্তা আমাদের শরীরের প্রয়োজনীয় ক্রিয়া কলাপে বাধা ও অনিয়ম সৃষ্ঠী করে যার ফলে শরীরের নানা রকমের ক্ষতি হয়।  

হরমোন ব্যালান্স

দুশ্চিন্তার সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়ে আমাদের হরমনের উত্পাদন ও নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতার উপর কারণ এটি বৈজ্ঞানিক ভাবে প্রমানিত যে দুশ্চিন্তা আমাদের রক্তের মধ্যে রাসায়নিক বিষ বা টকসিন (Toxin) উত্পাদন মাত্রা বহু গুনে বাড়িয়ে তোলে।

রক্ত চাপ

সুস্থ শরীরের জন্য সঠিক রক্ত চাপ ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু দুশ্চিন্তা আমাদের শরীরে cortisolও adrenaline হরমোন প্রভাব কে বৃদ্ধি করে, যার ফলে রক্ত চাপ অতি মাত্রায় বৃদ্ধি পায় এবং শরীরের নানা ক্ষতি সাধন হয়।

অনিয়ন্ত্রিত সুগার বা Diabetes

দুশ্চিন্তা আমাদের শরীরের ইনসুলিন (insulin) হরমনের উত্পাদন ও নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতার উপর প্রভাব বিস্তার করে, যার ফলে আমাদের রক্তে অতি মাত্রায় সুগার পরিমাণ বাড়তে থাকে যা শরীর কে ধীরে ধীরে নানা মারত্বক রোগের দিকে ঠেলে দেয়।

হৃদ রোগ

দুশ্চিন্তা ও হাই স্ট্রেস আমাদের সরাসরি হৃদ স্পন্দনের উপর প্রভাব বিস্তার করে, যাতে হৃদ স্পন্দন  অস্বাভাবিক রকম বৃদ্ধি পায় ও দীর্ঘ দিন এই সমস্যা মানুষর হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা 60% বাড়িয়ে তলে।   

অধৈর্য ও বদমেজাজ

নানা পরিক্ষার দ্বারা প্রমানিত দুশ্চিন্তা বা স্ট্রেস মানুষের স্মৃতি শক্তি থেকে শুরু করে ধৈর্য ক্ষমতার উপর ক্ষতিকারক প্রভাব ফেলে, এছাড়াও এই রোগের সবচেয়ে বড় ক্ষতিকর দিক হল অবসাদ, যা মানুষ কে মানসিক ভাবে অতি দুর্বল করে তলে।


ডিপ্রেশন কখন ঝুঁকিপূর্ণ?

কিছু কিছু মানুষের অন্যদের তুলনায় বিষণ্ণতার ঝুঁকি বেশি থাকে। কাদের ঝুঁকি বেশি দেখা যায়। 

জীবনের নির্দিষ্ট কিছু ঘটনার সম্মুখীন হওয়া, যেমন শোক, কাজের সমস্যা, সম্পর্কের পরিবর্তন, আর্থিক সমস্যা এবং চিকিৎসা সংক্রান্ত উদ্বেগ

  • তীব্র মানসিক চাপের সম্মুখীন
  • সফল মোকাবেলার কৌশলগুলি অজানা
  • মাথায় আঘাত লেগেছে

কোন দীর্ঘস্থায়ী অবস্থা, যেমন ডায়াবেটিস, ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ (সিওপিডি), বা কার্ডিওভাসকুলার রোগ

  • দীর্ঘস্থায়ী ব্যথার সঙ্গে বসবাস
  • সামাজিক সমর্থনের অভাব


ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির উপায়

ডিপ্রেশন থেকে পরিত্রাণের জন্য সর্বপ্রথম নিজেকে এগিয়ে আসতে হবে। আপনি চাইলেই ডিপ্রেশন থেকে মুক্তি পেতে পারেন। প্রয়োজন শুধুমাত্র আপনার ইচ্ছাশক্তির। চলুন জেনে নেওয়া যাক বিষন্নতা বা ডিপ্রেশন দূর করার উপায়সমূহ:

ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির উপায়

১. নিজেকে ব্যস্ত রাখুন: যেহেতু ডিপ্রেশন থেকে মুক্তি পেতে গেলে সর্বপ্রথম আপনাকে নিজেকে এগিয়ে আসতে হবে তাই নিজের ভালো থাকাটা এক্ষেত্রে জরুরী। আপনার উচিত নিজেকে কোন না কোন কাজে সব সময় ব্যস্ত রাখা। তবে অবশ্যই তা চাপ নিয়ে নয়। আপনি যেটা করতে পছন্দ করেন সেই কাজটি করুন। শখের কাজগুলো করুন। নিজেকে ব্যস্ত রাখতে পারলে আস্তে আস্তে ডিপ্রেশন কেটে যায়।

২. নিজেকে ভালোবাসুন: নিজেকে যারা ভালোবাসে না তারা সবচেয়ে বেশি ডিপ্রেশনে ভোগে। একাকীত্ব ঘিরে ধরে তাদের। তাই নিজেকে নিজেই সময় দিন ও ছোট ছোট সফলতার জন্য নিজেকে পুরষ্কৃত করুন। নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করুন আপনি কি চান। সর্বোপরি নিজের ভালোলাগা ও ভালোথাকাকে প্রাধান্য দিন।

৩. সঠিক ডায়েট: ডিপ্রেশনের সাথে সঠিক ডায়েটের বিষয়টিও জড়িত। চেষ্টা করুন পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করতে। অ্যান্টি-অক্সিডেন্টযুক্ত খাবার, ওমেগা থ্রি, ওমেগা ফ্যাটি-এসিডযুক্ত খাবার, ভিটামিন-এ, বি কমপ্লেক্স, ডি সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করুন। মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, সামদ্রিক মাছ, ফল, সবুজ ও রঙীন শাক-সবজী, বাদাম, ডাল প্রভৃতি পরিমিতভাবে গ্রহণ করুন। দিনে অন্তত তিন লিটার পানি খান। যা আপনার মেটাবলিজমকে ব্যালেন্স করবে ও শরীরের দূষিত টক্সিক বের করতে সাহায্য করবে। চিনি বা মিষ্টিজাতীয় খাবার, তেল-চর্বি জাতীয় খাবার, লাল মাংস, ফাস্ট ফুড অতিরিক্ত চা-কফি যতটা পারবেন পরিত্যাগ করুন। মানুষ ডিপ্রেশনে পড়লে এসব খাবারে আকৃষ্ট হয়। তাই এসব খাবার গ্রহণ না করে স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করুন।

৪. মেডিটেশন, ইয়োগা ও ব্যায়াম: প্রতিটি মানুষের উচিত নিয়মিত শরীরচর্চা করা। এতে মন ভালো থাকে, কাজে উদ্যম আসে, কনফিডেন্স বাড়ে। নিয়মিত শরীরচর্চা করলে ডিপ্রেশন দূর হয়। প্রতিদিন নিয়ম করে মেডিটেশন করলে মন শান্ত ও প্রফুল্ল হয়। তাই মনের অস্থিরতা কাটাতে মেডিটেশন করা উচিত। এছাড়া ইয়োগা করলে আপনার শরীর যেমন ফিট থাকবে তেমনি আপনি সুশৃঙ্খল জীবনযাপনে অভ্যস্ত হবেন। তাছাড়া আপনি কিছু না করলেও নিয়মিত ৩০-৪৫ মিনিট হাঁটুন। সাইকেলিং, সুইমিং এগুলোও করতে পারেন। তাছাড়া মাঝেমধ্যে ফুটবল, ক্রিকেট, ব্যাটমিন্টন, টেবিল টেনিস এসব খেলাধূলা করতে পারেন। এগুলো করলে ডিপ্রেশন কাটে।

৫. কাউন্সিলিং করুন: ডিপ্রেশনের মাত্রা বেশি হলে অবশ্যই ক্লিনিক্যাল কাউন্সিলিং করা জরুরী। একজন ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্টের অধীনে থেকে এটি আপনি ব্যক্তিগতভাবে বা দলগতভাবে করতে পারেন। কাউন্সিলিং এমন একটি থেরাপি যার মাধ্যমে আপনাকে আপনার সাইকোলজিস্ট শুধুমাত্র পথনির্দেশনা দিবেন কিন্তু সমাধানের পথ আপনার কাছ থেকেই উনি বের করে নিবেন। তবে এক্ষেত্রে সাইকোলজিস্ট আপনাকে সহায়তা করবেন। নিয়মিত কাউন্সিলিং করে অনেকেই ডিপ্রেশন কাটিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারেন নতুন উদ্যমে।

৬. মিউজিক থেরাপি: ডিপ্রেশন কাটাতে মিউজিক থেরাপি খুবই কাজের। এটি মন ভালো রাখতে সহায়ক। আপনি সফট মিউজিক থেরাপি নিতে পারেন। যা আপনার মস্তিষ্ককে শান্ত করবে অথবা আপনার পছন্দসই গানও আপনি শুনতে পারেন।

৭. ইতিবাচক চিন্তা: যারা ডিপ্রেশনে ভোগেন তারা সবসময় নেতিবাচক চিন্তা করেন, যা ডিপ্রেশনকে আরও বাড়িয়ে তোলে। নেগেটিভ চিন্তা বাদ দিয়ে সবসময় পজেটিভ চিন্তা করুন। কোন বিষয় নিয়ে অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা করা বাদ দিন। আমি পারবোনা, আমাকে দিয়ে হবে না, এটা না হলে কি হবে প্রভৃতি চিন্তা বাদ দিয়ে আপনি পারবেন ও চেষ্টা করবেন এমন ইতিবাচক চিন্তা করুন।

৮. ডিভাইস দূরে রাখুন: অতিরিক্ত ডিভাইস ও সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার ডিপ্রেশন সৃষ্টিতে সহায়ক। তাই দিনের নির্দিষ্ট সময় ভিডাইস ও সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করুন। দরকার ছাড়া এগুলোর অপ্রয়োজনীয় ব্যবহার কমিয়ে দিন। কাজের তাগিদে এগুলো ব্যবহার করুন।

৯. বিনোদনপূর্ণ ও শিক্ষানীয় ভিডিও দেখুন: বিনোদনপূর্ণ মুভি, কার্টুন, নাটক, ভিডিও যেগুলো আপনাকে হাসাবে বা শিক্ষনীয় ভিডিও সেগুলো দেখুন। আপনার পছন্দসই মুভি, নাটক যা আপনার মন ভালো করে এগুলো দেখুন এতে ডিপ্রেশন কাটবে, তবে এমন কিছুই দেখা উচিত নয় যেগুলো দেখলে উল্টে আপনার ডিপ্রেশন বেড়ে যাবে।

১০. বই পড়ুন ও জ্ঞানচর্চা করুন: বই মানুষকে বিকশিত করে। তাই নিয়মিত বই পড়ার অভ্যাস করুন ও ব্যক্তিজীবনে সেই জ্ঞান কাজে লাগান। আপনার ডিপ্রেশন কাটাতে বই অনেকটায় সহায়ক। এজন্য আপনাকে বইয়ের সাথে আত্মীক সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে।

১১. স্ট্রেস কমান: ছাত্রজীবন, কর্মজীবন ও ব্যক্তিজীবনে স্ট্রেস কমানোর চেষ্টা করুন। এজন্য আপনাকে অবশ্যই সময়ের কাজ সময়ে করতে হবে। কাজ ফেলে রাখলে স্ট্রেস বাড়ে৷ সময়ের কাজটুকু যথাসময়ে শেষ করার চেষ্টা করুন। নিয়মিত কাজ ভাগ করে কাজ করুন।

১২. পরিবারকে সময় দিন: নিয়মিত পরিবারকে সময় দিলে ডিপ্রেশন কাটে। সদস্যদের সাথে গল্প করুন, তাদের সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করুন, তাদের পাশে দাঁড়ান। আপনার কোন সমস্যা হলে পরিবারের সাথে শেয়ার করুন। সবসময় পরিবারের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা করুন। বিবাহিত হলে জীবনসঙ্গীর সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা করুন। এতে দাম্পত্য জীবন সুখের হয়।

১৩. বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিন: বয়স বাড়লে বন্ধু কমে তবে এমন ১/২ জন বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ রাখুন যারা আপনার বিপদে আপনার পাশে থাকবে। তাদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ করুন, আড্ডা দিন, মজা করুন। এতে মন ভালো থাকবে।

১৪. ভ্রমণ করুন: বছরে অন্তত একবার ট্যুরে যান। এতে মন ভালো থাকবে, নতুন করে কাজে উদ্যম পাবেন। পরিবার বা বন্ধুেদর সাথে ট্যুরে গেলে মন ভালো থাকে।

১৫. ইতিবাচক মানুষের সাথে সম্পর্ক রাখুন: সবসময় চেষ্টা করবেন ইতিবাচক মানুষের সাথে মেলামেশা করতে। এতে দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হয়৷ যতটা পারবেন নেগেটিভ মাইন্ডের মানুষ থেকে দূরে থাকবেন যাতে আপনার মধ্যে নেগেটিভিটির সৃষ্টি না হয়। যারা আপনাকে নিয়ে কটাক্ষ করে সেসব মানুষের থেকে দূরে থাকুন। ‘লোকে কি বলবে’- এ চিন্তা বাদ দিয়ে আপনার যেটি ভালো মনে হয় সেটি করুন, লোকের কথায় কান দিতে যাবেন না। পজেটিভ মানুষের সাথে মিশলে পজেটিভ মোটিভেশন পাবেন ও পজেটিভ মাইন্ডের হবেন ফলে ডিপ্রেশন কাটবে।

১৬. প্রার্থনা করুন: ডিপ্রেশন কাটানোর অন্যতম হাতিয়ার আপনার সৃষ্টিকর্তার প্রার্থনা করা। প্রতিটি মানুষের উচিত তার ধর্মানুসারে সৃষ্টিকর্তার উপর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা। কার মুখ দেখে ঘুম থেকে উঠলাম না বলে বলা উচিত আজকের দিনটা সুন্দর এবং সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করুন সুন্দর একটি দিনের জন্য। নিয়মিত প্রার্থনা, ধর্মচর্চা ও ধর্মীয়গ্রন্থ পড়ুন এতে ডিপ্রেশন কাটে।

১৭. ডায়েরি লেখার অভ্যাস করুন: নিয়মিত ডায়েরি লেখার অভ্যাস থাকলে আপনি অনেক কিছুই লিখে রাখতে পারেন। অর্থাৎ যা আপনি মুখে বলতে পারেন না সেটিই লিখুন। কারও প্রতি রাগ-ক্ষোভ থাকলে ঝেড়ে ফেলুন ডায়েরিতে এতে দেখবেন আপনার রাগ কমে নাই হয়ে যাবে। আপনার যত রাগই থাকুক না কেন বিষয়টি আপনার কাছে তুচ্ছ মনে হবে।

১৮. রিলেশনশীপের বিষয়ে পজেটিভ থাকুন: রিলেশনশীপের বিষয়ে সবসময় ইতিবাচক থাকুন। সম্পর্কের প্রতি যত্নশীল হউন। তবে সেটি অবশ্যই দ্বিপাক্ষিক বিষয় হতে হবে। একপক্ষীয় কোন কিছুই ঠিক নয়। রিলেশনশীপকে সম্মান করুন তবে সবসময় এটি নিয়ে চিন্তা করতে করতে ডিপ্রেশনে চলে যাবেন না। আপনার সব কাজকর্ম বাদ দিয়ে রিলেশনশীপ নিয়ে সবসময় বিজি থাকাটা বোকামি। সম্পর্কের সাথে নিজের পড়াশোনা, ক্যারিয়ার ঠিক রাখুন সাথে নিজেকেও আলাদা করে সময় দিন, নিজের যত্ন নিন।

আপনার সম্পূর্ণ চেষ্টা থাকার পরও যদি ব্যক্তিগত বা পারিবারিক কারণে বিয়ে না হওয়া বা সম্পর্কটি না টিকলে ডিপ্রেশনে পড়বেন না। পজেটিভ থাকুন, নিজেকে বোঝান- আপনার চেষ্টার ত্রুটি ছিল না। ব্রেকআপের পর ভেঙে না পড়ে পড়াশোনা, কাজে উদ্যমী হন। নিজের ক্যারিয়ার, পজিশন ঠিক রাখুন। সম্পর্কের মানুষটিকে ঘৃণা না করে, দোষ না দিয়ে সবসময় শ্রদ্ধা ও সম্মান করুন। তার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা থেকে বিরত থাকুন ও বিষয়টি মেনে নিতে শিখুন।

১৯. আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করুন: প্রতিটি মানুষেরই আবেগ আছে তবে অতিরিক্ত আবেগ ডিপ্রেশনের কারণ। অতিরিক্ত আবেগী মানুষগুলো অল্পতেই ভেঙে পড়ে। কিছু কিছু পরিস্থিতিতে আবেগকে ছাপিয়ে বাস্তবতাকে প্রাধান্য দিতে হয়। আপনার পরিস্থিতি যত খারাপই হোক না কেন সেটায় মানিয়ে নিতে শিখুন। আবেগী হলে জীবনে পরিবর্তন আসবে না। তাই আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে শিখুন।

২০. সামাজিক কার্যকলাপ: আপনি চাইলেই বিভিন্ন সামাজিক কার্যকলাপে অংশ নিতে পারেন। দুঃস্থ-অসহায় মানুষ, অসহায় শিশু-বৃদ্ধদের পাশে দাঁড়ান, বন্যাকবলিত, ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় ত্রাণ সরবারাবহ করুন, পথশিশুদের লেখাপড়া শেখান। এমন সামাজিক কাজ মনকে প্রফুল্ল করে। মানুষকে সহায়তা করলে মানসিক তৃপ্তি আসে।


ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির উপায় নিয়ে শেষ কথা

ডিপ্রেশন কি? বুঝতে পেরেছেন তো! আমাদের কারো জীবনই স্থিতিশীল নয়, সুখ-দুঃখ নিয়েই মানুষের জীবন। কষ্ট, দুর্দশা, ডিপ্রেশন না থাকলে সুখের কি গুরুত্ব থাকতো? ডিপ্রেশন যদি এসেই যায় তবে নিজে ভেঙ্গে না পরে ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির উপায় খুঁজে বের করার চেষ্টা করুন।

ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির উপায়

বিখ্যাত ইংলিশ রাইটার ও অভিনেতা ম্যাট লুইসের একটি কথা এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে।

“Keep yourself busy if you want to avoid depression. For me, inactivity is the enemy.” — Matt Lucas"

ডিপ্রেশন থেকে মুক্তি পেতে নিজেকে ব্যস্ত রাখা খুবই ইফেক্টিভ উপায়। তাই, এমন কোনো কঠিন অবস্থায় পড়ে গেলে নিজেকে একা, অলস, কর্মহীন থাকার সুযোগ দিবেন না।

ডিপ্রেশনে আক্রান্ত মানুষ প্রায়শই আত্মঘাতী হয়ে থাকেন, কিন্তু আত্মহত্যার পরিণাম কি বলুন তো! আপনি যদি দুনিয়ায় নিজেকে একজন ব্যর্থ হিসেবে মেনেও নেন, তাহলে কেনো আখিরাতকেও নষ্ট করতে চাচ্ছেন! দুনিয়াই তো শেষ কথা নয় (ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের জন্য)।

নিজেকে উজার করে দিন, নিজের মনের বিরূদ্ধে কিছু না করে আত্মপত্যয়ী থাকুন এবং ডিপ্রেশন মুক্ত থাকুন। মনে রাখবেন বর্তমান অবস্থাই আপনার চিরস্থায়ী অবস্থা নয়।

প্রচন্ড ডিপ্রেশনে ভুগছে এমন কেউ যদি আপনার আশে পাশে থাকে তবে ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির উপায় দেখান, তার পাশে থাকুন এবং আত্মবিশ্বাস ফিরে পেতে সাহায্য করুন।

Post a Comment

Previous Post Next Post