বাংলাদেশের প্রধান ১০টি নদ-নদী নাম ও পরিচিতি।

আসামুলাইকুম বন্ধুরা,  আপনারা সবাই কেমন আছেন আশা করি সবাই ভালো আছেন আমি আপনাদের দোয়াই ভালোই আছি। আজকে আমাদের টপিক হলো বাংলাদেশে ১০টি নদ-নদী সর্ম্পকে জানবো। তো আর কথা না বাড়িয়ে শুরু করা যাক। 

আমাদের দেশ একটি নদীমাতিৃক দেশ বাংলাদেশ। এদেশে অসংখ্য নদ-নদী রয়েছে। তার ভিতর আমরা ১০টি নদ- নদী নিয়ে আজকে আলোচনা করবো।



যমুনা নদী:

যমুনা নদী আমাদের দেশের উত্তর দক্ষিণে প্রবাহিত সবচেয়ে প্রশস্ত নদী। বর্ষাতে এর প্রবাহ অনেক বেশি থাকে। গড়ে প্রায় ৪০,০০০ কিউমেক পানি প্রবাহিত হয়। এজন্যই এই নদী আমাজন, কঙ্গো, লা প্লাটা, ইয়াংসি, মিসিসিপি ও মেঘনা নদীর পর সপ্তম স্থানে আছে। ১৯৮৮ সালে এর প্রবাহ আগস্ট মাসে রেকর্ড পরিমান হয়। ৯৮,৬০০ কিউমেক পানি প্রবাহিত হয় তখন। এরকম বিশাল পরিমানের পানি প্রবাহের ফলে প্রায়ই বন্যা দেখা দেয় বিশেষ করে আগস্ট মাসে। 

পদ্মার থেকে যমুনার প্রবাহের গতি বেশি। যমুনা যেমন জলরাশি প্রবাহ করে তেমনি পলিরাশিও প্রবাহ করে। বর্ষায় যমুনা নদী প্রতিদিন প্রায় ১২ লক্ষ্ টন পলি বহন করে। যমুনা নদীর চারটি উপনদী। দুধকুমার, তিস্তা, করতোয়া- আত্রাই, ধরলা। করতোয়া নদী হল সবচেয়ে বড় ও দীর্ঘ উপনদী যমুনার। তিস্তা, দুধকুমার ও ধরলা নদী হল খরস্রোতা নদী। যমুনা নদীর জন্য বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলের সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা তেমন উন্নত ছিলনা। শুধু নদী পথ ছাড়া। তাই ১৯৯৮ সালে চালু হয় যমুনা সেতু। এই সেতু বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় দীর্ঘতম সেতু। এর দৈর্ঘ্য ৪.৮ কিমি। এই সেতুর উপর দিয়ে যানবাহন এবং রেলগাড়ি চলাচল করে। ১৯৯৪ সালে এর কাজ শুরু হয়। এর বর্তমান নাম বঙ্গবন্ধু সেতু।


পদ্মা নদী:

রাজশাহী জেলার বাঘা উপজেলার পার্শ্ব দিয়ে প্রবাহমান বাংলাদেশের অন্যতম নদী পদ্মা। উপজেলার প্রায় ২০ কি.মি. এলাকা জুড়ে ইহা প্রবাহিত হয়েছে। বর্ষাকালে নদীর দুকূল ছাপিয়ে যায়। আবার শুস্ক মউসুমে জেগে উঠে বিশালাকৃতির চর। শরতে কাশফুল। এর প্রাকৃতিক দৃশ্য অত্যন্ত মনোরম।হিমালয়ের গঙ্গোত্রী হিমবাহ থেকে উৎপন্ন গঙ্গা নদীর প্রধান শাখা চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলায় (মানাকোসা ও দুর্লভপুর ইউনিয়ন) বাংলাদেশে প্রবেশ করে, এখান থেকে নদীটি পদ্মা নাম ধারণ করেছে। গঙ্গার অন্য শাখাটি ভাগীরথী নামে ভারতে হুগলীর দিকে প্রবাহিত হয়। উৎপত্তিস্থল হতে ২২০০ কিলোমিটার দূরে গোয়ালন্দে যমুনা নদীর সাথে মিলিত হয়ে মিলিত প্রবাহ পদ্মা নামে আরো পূর্ব দিকে চাঁদপুর জেলায় মেঘনা নদীর সাথে মিলিত হয়েছে। সবশেষে পদ্মা-মেঘনার মিলিত প্রবাহ মেঘনা নাম ধারণ করে দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের সাথে মিলিত হয়।


ব্রহ্মপুত্র নদ:

ব্রহ্মপুত্রের উৎপত্তি হিমালয় পর্বতমালার কৈলাস শৃঙ্গের নিকট জিমা ইয়ংজং হিমবাহে, যা তিব্বতের পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত। সাং পো নামে তিব্বতে পুর্বদিকে প্রবাহিত হয়ে এটি অরুণাচল প্রদেশে ভারতে প্রবেশ করে যখন এর নাম হয়ে যায় সিয়ং। তারপর আসামের উপর দিয়ে দিহং নামে বয়ে যাবার সময় এতে দিবং এবং লোহিত নামে আরো দুটি বড় নদী যোগ দেয় এবং তখন সমতলে এসে চওড়া হয়ে এর নাম হয় ব্রহ্মপুত্র। তারপর এটি বাংলাদেশে প্রবেশ করে এবং বঙ্গোপসাগরে গিয়ে মেশে। উৎপত্তিস্থল থেকে এর দৈর্ঘ্য ২৯০০ কিলোমিটার। ব্রহ্মপুত্রের প্রধান শাখা হচ্ছে যমুনা।


মেঘনা নদী:

মেঘনা নদী বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের কিশোরগঞ্জ, নরসিংদী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা, মুন্সীগঞ্জ, চাঁদপুর, বরিশাল, ভোলা ও লক্ষ্মীপুর জেলার একটি নদী। নদীটির দৈর্ঘ্য ১৫৬ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ৩৪০০ মিটার এবং নদীটির প্রকৃতি সর্পিলাকার। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড "পাউবো" কর্তৃক মেঘনা আপার নদীর প্রদত্ত পরিচিতি নম্বর দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের নদী নং ১৭। মেঘনা বাংলাদেশের গভীর ও প্রশস্ততম নদী এবং অন্যতম বৃহৎ ও প্রধান নদী। মেঘনা পৃথিবীর বড় নদীগুলোর মতোই অনেক বেশি বৃষ্টির পানি বহন করে। 

এই নদী সুরমা, কুশিয়ারা, খাসিয়া-জয়ন্তীয়া পাহাড়, শিলং উপত্যকা ও চেরাপুঞ্জির বৃষ্টির পানি বহন করে আনে। ভারতের মেঘালয় রাজ্যের চেরাপুঞ্জিতে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়। বৃষ্টির বিপুল জলরাশির জন্য সিলেটে বড় বড় বিল বা হাওর তৈরি হয়েছে। আর এ কারনে মেঘনা খুব গভীর ও খরস্রোতা। ঢল বা বন্যার জন্য মেঘনা বিখ্যাত। বৃষ্টির পানি যখন খুব দ্রুত মোহনার কাছে পৌঁছাতে পারে না তখনই এর দু'কূল ছাপিয়ে বন্যা হয়। চাঁদপুরের কাছে পদ্মা-মেঘনার মিলনস্থলে প্রচুর ইলিশ পাওয়া যায়। এই ইলিশ অত্যন্ত সুস্বাদু। এজন্য চাঁদপুরের ইলিশ বিশ্ববিখ্যাত। কুমিল্লার দাউদকান্দিতে মেঘনা নদীর উপর সুদীর্ঘ মেঘনা-গোমতী সেতুর অবস্থান। এছাড়াও ভৈরবের রেলওয়ে সেতু এ নদীর উপর একটি গুরুত্বপূর্ণ সেতু।


কর্ণফুলী নদী:

কর্ণফুলী নদী ইংরেজি নাম Karnaphuli River বাংলাদেশ-ভারতের একটি আন্তঃসীমান্ত নদী। এটি বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের একটি প্রধান নদী। এটি ভারতের মিজোরামের লুসাই পাহাড়ে শুরু হয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম ও চট্টগ্রামের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে চট্টগ্রামের পতেঙ্গার কাছে বঙ্গোপসাগরে মিলিত হয়েছে। এই নদীর মোহনাতে বাংলাদেশের প্রধান সমূদ্র বন্দর চট্টগ্রাম বন্দর অবস্থিত। এই নদীর দৈর্ঘ্য ৩২০ কিলোমিটার।

কর্ণফুলী নদীর নামের উৎস সম্পর্কে বিভিন্ন কাহিনী প্রচলিত আছে। কথিত আছে যে, আরাকানের এক রাজকন্যা চট্টগ্রামের এক আদিবাসী রাজপুত্রের প্রেমে পড়েন। এক জ্যোৎস্নাস্নাত রাতে তাঁরা দুই জন এই নদীতে নৌভ্রমণ উপভোগ করছিলেন। নদীর পানিতে চাঁদের প্রতিফলন দেখার সময় রাজকন্যার কানে গোঁজা একটি ফুল পানিতে পড়ে যায়। ফুলটি হারিয়ে কাতর রাজকন্যা সেটা উদ্ধারের জন্য পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়েন। কিন্তু প্রবল স্রোতে রাজকন্যা ভেসে যান, তাঁর আর খোঁজ পাওয়া যায় নি। রাজপুত্র রাজকন্যাকে বাঁচাতে পানিতে লাফ দেন, কিন্তু সফল হন নি। রাজকন্যার শোকে রাজপুত্র পানিতে ডুবে আত্মাহুতি দেন। এই করুণ কাহিনী থেকেই নদীটির নাম হয় 'কর্ণফুলী।


তিস্তা নদী:

তিস্তা নদী বাংলাদেশ-ভারতের একটি আন্তঃসীমান্ত নদী। এটি ভারতের সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য ও বাংলাদেশের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত একটি নদী। তিস্তা সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি বিভাগের প্রধান নদী। একে সিকিম ও উত্তরবঙ্গের জীবনরেখাও বলা হয়। সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গের উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার পর বাংলাদেশে প্রবেশ করে তিস্তা ব্রহ্মপুত্র নদের সঙ্গে মিলিত হয়েছে।

হিন্দু পুরাণ অনুসারে এটি দেবী পার্বতীর স্তন থেকে উৎপন্ন হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে নদীটির বাংলা নাম তিস্তা এসেছে ‘ত্রি-সে্রাতা’ বা ‘তিন প্রবাহ’ থেকে। সিকিম হিমালয়ের ৭,২০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত চিতামু হ্রদ থেকে এই নদীটি সৃষ্টি হয়েছে। এটি দার্জিলিং -এ অবস্থিত শিভক গোলা নামে পরিচিত একটি গিরিসঙ্কটের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। দার্জিলিং পাহাড়ে তিস্তা একটি বন্য নদী এবং এর উপত্যকা ঘনবনে আচ্ছাদিত। পার্বত্য এলাকায় এর নিষ্পাশন এলাকার পরিমাণ মাত্র ১২,৫০০ বর্গ কিলোমিটার। পার্বত্য এলাকা থেকে প্রথমে প্রবাহটি দার্জিলিং সমভূমিতে নেমে আসে এবং পরে পশ্চিমবঙ্গের (ভারত) দুয়ার সমভূমিতে প্রবেশ করে। নদীটি নিলফামারী জেলার কালীগঞ্জ সীমান্ত এলাকা দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। 

তিস্তার মাসিক গড় পানি অপসারণের পরিমাণ ২,৪৩০ কিউসেক। ২০১৪ খ্রিস্টাব্দে তিস্তার ভারতীয় অংশে গজলডোবায় স্থাপিত বাঁধের সবগুলি গেটবন্ধ বন্ধ করে দেয়া হলে তিস্তা নদীর বাংলাদেশ অংশে পানিপ্রবাহ শূন্যে নেমে আসে।


করতোয়া নদী:

বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় নদী করতোয়া। ভারতের জলপাইগুড়ি থেকে উত্পত্তি হয়ে বাংলাদেশের পঞ্চগড় দিয়ে ঢুকে দিনাজপুরে আত্রাই নদীতে গিয়ে মিলেছে। বাংলাদেশ অংশে নদীটির দৈর্ঘ্য ১৮৭ কিলোমিটার। প্রস্থ গড়ে ১৩৫ মিটার। গড় গভীরতা ৭ মিটার।

করতোয়া নামের ‘কর’ মানে হাত, আর ‘তোয়া’ হচ্ছে পানি। কেউ কেউ এটাও বিশ্বাস করেন শিবের হাতে ঢালা পানি থেকেই এ নদীর উত্পত্তি! বহু পুরনো এই নদীর কথা মহাভারতেও উল্লেখ আছে। একসময় এ নদীর তীরেই প্রাচীন নগরী পুন্ড্রবর্ধনের রাজধানী [বর্তমান মহাস্থানগড়] গড়ে উঠেছিল। বেশ কয়েকবার এ নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়েছে।


মহানন্দা নদী:

নদীমাতৃক এই বাংলাদেশে বেশ কিছু নদী আছে যেগুলোর জন্য পুরো স্থানের অবস্থায় পাল্টে গেছে। মহানন্দা নদী হল এমন একটি নদী। এই নদী চাঁপাইনবাবগঞ্জের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এই নদীর জন্য গৌড়ের রাজধানীর কিছু অংশ এই স্থানে অবস্থিত ছিল। এই মহানন্দা নদীর জন্য শহরটি হয়ে ওঠে গুরুত্বপূর্ণ এক স্থান। আমাদের আজকের প্রবন্ধের বিষয় এই মহানন্দা নদীকে নিয়ে। মহানন্দা নদী হল বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে যত আন্তঃসীমা নদী আছে তার মধ্যে একটি। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ আন্তঃসীমান্ত নদী। এই নদী হল গঙ্গা নদীর একমাত্র উপনদী। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড অনুযায়ী এই নদীর পরিচিত নাম্বার হল উত্তর- পশ্চিমাঞ্চলের নদী নং ৯৫। মহানন্দা নদী উৎপন্ন হয়েছে দার্জিলিং জেলার অংশে। এই মহানন্দা নদী নেপালের দক্ষিণ- পশ্চিমস্থ হিমালয় থেকে উৎপন্ন হয়ে দক্ষিণ- পশ্চিম দিকে প্রবাহিত হয়ে কারসিয়াং এবং শিলিগুড়ি দিয়ে অতিক্রম করে বাংলাদেশের তেতুলিয়াতে প্রবেশ করে এবং এটি আবার ভারতের পশ্চিমবঙ্গের পূর্ণিয়া ও মালদহ জেলার ভিতর দিয়ে প্রবেশ করে দক্ষিণপূর্ব দিক দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ভোলাহাটের কাছ দিয়ে পুনরায় বাংলাদেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রবেশ করেছে। মহানন্দা নদী বাংলাদেশ সীমান্তে প্রবেশ করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শহরকে বাম তীরে রেখে গোদাগাড়ি স্থানে যেয়ে পদ্ম নদীর মধ্যে পতিত হয়েছে।

বৃষ্টির পানি হল মহানন্দা নদীর প্রধান উৎস। এজন্য শুকনো মৌসুমে মানে গ্রীষ্ম বা গরমের সময় এবং শীতকালে এই নদীর পানি অনেক কমে যায়। কিন্তু আবার বর্ষাকালে অনেক বৃষ্টির ফলে নদীর পানি অনেক বেড়ে যায় ও বন্যা দেখা দেয় অনেক সময়। এসময় দুকূল পানিতে ভরে যায়। মহানন্দা নদীর মোট দৈর্ঘ্য হল প্রায় ৩৬০ কিমি বা ২২৪ মাইল ও গড় প্রস্থ হল ৪৬০ মিটার। এর মধ্যে বাংলাদেশে এই নদীর দৈর্ঘ্য ৩৬ কিমি। মহানন্দা নদীর প্রকৃতি সর্পিলাকার।


ধরলা নদী:

ধরলা নদী (Dharla River)  একটি আন্তঃসীমান্ত নদী লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রামের চ্যাংগ্রাবান্ধা দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। ভারতে অবস্থিত উজান প্রবাহে নদীটি জলঢাকা অথবা শিংগিমারি নামে পরিচিত। পাটগ্রাম পুলিশ স্টেশনের কাছে নদীটি পুনরায় ভারতে প্রবেশ করে মোটামুটি পূর্বদিকে প্রবাহিত হয়েছে। অকস্মাৎ এটি দক্ষিণে বাঁক নিয়ে কুড়িগ্রাম জেলা দিয়ে দ্বিতীয়বার বাংলাদেশ ভূখন্ডে প্রবেশ করে সর্পিল গতিতে প্রবাহিত হয়েছে। ধরলার ডান তীরে কুড়িগ্রাম শহর। কুড়িগ্রাম শহরের কয়েক কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে নদীটি ব্রহ্মপুত্র নদের সঙ্গে মিলিত হয়েছে। রংপুরে নীলকুমার নামে ধরলার একটি ছোট উপনদী আছে। বর্ষার শুরুতে ধরলাতে স্রোত খুব বেড়ে যায় এবং নদীতীরে ব্যাপক ভাঙ্গন দেখা দেয়। শুষ্ক মৌসুমে নদীর প্রবাহ খুব হ্রাস পায়; বিশেষত জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত নদী খাত প্রায় শুষ্ক থাকে। এ নদী নিম্ন অববাহিকা বর্ষার শুরুতে পাহাড়ী ঢল জনিত আকস্মিক বন্যা কবলিত হয়। নদী তীর অধিকমাত্রায় বেলে যুক্ত ও ঢাল বেশি হওয়ায় ভাঙ্গন প্রবণতা অধিক। প্রায় প্রতি বছরই নদী তীরবর্তী প্লাবনভূমি বর্ষায় বন্যা কবলিত হয়। বাংলাদেশ অংশে নদীটির মোট দৈর্ঘ্য ৭৫ কিমি।


বুড়িগঙ্গা নদী:

বুড়িগঙ্গা নদী (Buriganga River)  ঢাকা শহরের দক্ষিণ এবং পশ্চিম দিক দিয়ে প্রবাহিত জোয়ারভাটা প্রভাবিত একটি নদী। মুগলরা এই নদীটির জোয়ারভাটার রূপ দেখে বিস্ময়াভিভূত হয়ে পড়েছিল। নদীটির নামকরণ বুড়িগঙ্গা করার পেছনে একটি সনাতনী কাহিনী রয়েছে। প্রাচীনকালে গঙ্গা নদীর একটি প্রবাহ ধলেশ্বরীর মাধ্যমে বঙ্গোপসাগরে পতিত হতো। ধীরে ধীরে এই প্রবাহটি তার গতিপথ পরিবর্তন করার ফলে একসময় গঙ্গার সঙ্গে তার যোগাযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পরবর্তীতে এই বিচ্ছিন্ন প্রবাহটি বুড়িগঙ্গা নামে অভিহিত হয়।


সাভারের দক্ষিণে ধলেশ্বরী নদী থেকে বুড়িগঙ্গা নদীর উদ্ভব। নদীটির গড় গভীরতা ও প্রশস্ততা যথাক্রমে ১০ মিটার ও ৪০০ মিটার এবং মোট দৈর্ঘ্য ২৭ কিলোমিটার। ঢাকা শহরের কামরাঙ্গীর চরের কাছে তুরাগ নদী বুড়িগঙ্গা নদীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে বুড়িগঙ্গার প্রধান প্রবাহটি তুরাগ নদী থেকেই আসে। বুড়িগঙ্গা মুন্সিগঞ্জে ধলেশ্বরীর সঙ্গে মিলিত হয়। ছাগলাকান্দির কাছে বুড়িগঙ্গার উজান অঞ্চল পলিভরাটের মাধ্যমে বন্ধ হয়ে গিয়েছে এবং শুধুমাত্র বন্যার সময় প্রবাহ লাভ করে। বুড়িগঙ্গার ভাটি অঞ্চল সারাবছরই নাব্য থাকে। ধলেশ্বরী নদীর গতি-প্রকৃতির উপর নির্ভর করে ভাটি অঞ্চলে বুড়িগঙ্গা-ধলেশ্বরী মিলনস্থানের পরিবর্তন ঘটে। বর্তমানে এই মিলনস্থল ফতুল্লা থেকে ৩.২২ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থিত। ঢাকা শহরে ভূ-পৃষ্ঠে অথবা ভূগর্ভের অতি স্বল্প গভীরতায় ক্ষয়রোধকারী মধুপুর কর্দমশিলা পাওয়া যায়, ফলে বুড়িগঙ্গা নদীর গতিপ্রবাহ ঢাকা শহরে খুবই সুস্থিত।


ঢাকা শহরের জন্য বুড়িগঙ্গা নদী অর্থনৈতিকভাবেও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই নদী দিয়ে লঞ্চ এবং দেশী নৌকা চলাচল করতে পারে। তবে শুকনা মৌসুমে এই নদী দিয়ে বড় বড় স্টিমার চলাচল করতে পারে না। এই নদীর উপর দিয়ে ১৯৮৯ সালে ‘বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু’ নামে একটি সড়ক সেতু নির্মিত হয়েছে। এই সেতুর উপর দিয়ে পথচারী পারাপারও সম্ভব।


Online  থেকে ইনকাম করতে চাই এই পোস্টটি দেখুন     

তো কেমন লাগো আজকে টপিকটা আশা করি সবার ভালো লাগছে। যদি ভালো লেগে থাকে টপিকটা তাহলে অবশ্যই আপনার বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিবেন কারণ এগুলো শিক্ষণীয় বিষয় সবার জানা উচিত। সবাই ভালো থাকবেন। আল্লাহ হাফেজ।

Post a Comment

Previous Post Next Post